Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

রায়পুরা’র ভাষা ও সংস্কৃতি

মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র, কাঁকন ঘেরা রায়পুরা কৃষি ও তাঁতপ্রধান এলাকা। এখানকার জীবনধার কৃষ্টি ও সংস্কৃতি প্রাচীন না হলেও প্রাচীন। একদিন প্রখ্যাত পুঁথিকার আবদুল করিম মুন্সী ও জমির আলী মিয়াও তাদের দল পয়ার ছন্দের মূর্ছনায় এলাকাকে করেছিল উদ্বেলিত ও উজ্জীবিত। প্রথিতযশা ভাষা বিজ্ঞান ও শিক্ষাবিদ ড. মনিরুজ্জামান, নজরুল ধারার কবি আজিজুল হাকিম এবং মোজাফ্ফর হোসাইন এই এলাকারই বরেণ্য সন্তান। যথাযথ অনুসন্ধান চালালে অবশ্যই তাঁদের পূর্বসূরী এবং উত্তর সূরী বহু ক্ষণজন্ম ব্যক্তিত্ব আঃ সবেন যারা এই এলাকার কৃষ্টি সংস্কৃতি তথা ভাষাকে অনেক বেগবান করেছিলেন এবং এখনো করছেন।

 

সাধক কবীল বলেছেন কবির ভাষা বহুতাদী। তার সাথে রবীন্দ্রনাথ যোগ করেছেন শীতলতা। তার সাথে আরও একটি শব্দ জনবিচ্ছিন্ন যোগ করলে নিশ্চয়ই ধৃষ্টতা হবে না। কেননা আমরা জানি এ জনবিচ্ছিন্নতার কারণে আজ সাধু ভাষা মৃত। আজকের চলিত ভাষাও অনেক হোচট খেয়ে খেয়ে কথ্য ভাষার উপর সওয়ার হয়ে এগিয়ে চলছে। বৃহত্তর বরেণ্য কথ্য ভাষা তেমন সরব না হলেও নিজ নিজ এলাকায় কিন্তু যথেষ্ট সরস প্রাণবন্ত। 

প্রথমতঃ যেটি বিশেষভাবে লক্ষনীয় তা হল র এর পরিবর্তে ল এর ব্যবহার। প্রায় সর্বত্র তারা ল এর পরিবর্তে ল ব্যবহার করছে। যেমন: রাজা হলে- লাজা, রায়পুরা কে - লাইপুরা। ক্রিয়াপদ সমূহে অ পরিবর্তিত হয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে উ-তে পরিণত হয়ে। স শ হ ধ্বনিতে পরিণত হওয়ার প্রবণতা ও লক্ষ্য করা যায়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে আর্যগত বাংলাকে বলত চন্ডালের দেশ এবং এ লাকায় কোন আর্যপুত্র আগমন করলে তাকে রিতীমত প্রায়শ্চিত্ত করে সমাজে স্থান নিতে হতো। আর্যদের দৃষ্টিতে তথাকথিত নিচু জাতের মানুষের দ্বারা এই এলাকা আবাদ হয়েছে। বৌদ্ধ ধর্ম মূলত সে সকল নিচু জাতের মানুষকে প্রভাবান্বিত করেছিল। বৌদ্ধ ভিক্ষুগণ ধর্ম প্রচারে মাগধী প্রাকৃত ব্যবহার করত। তাই নিশ্চিত ভাবে বলা যায় ল আধিক্য সে ভাষারই প্রভাব।

 

ভাষা নদীর মত বহমান। পরিবর্তনশীল তার শব্দমালা বা ধ্বনি সমষ্টি। একটি নির্দিষ্ট ধ্বনি যখন কোন অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করে তা তখন অঞ্চল ভিত্তিক বা আঞ্চলিকতার প্রভাবে ভূষিত হয়। ক্রমে সে ডানা মেলতে চেষ্টা করে জাতীয় ভাষার অঙ্গনে। হয়তো পৌছেও যায়। অতি সম্প্রতি আমাদের সাহিত্য অঙ্গনে আঞ্চলিক ভাষার রমরমা অবস্থান তার প্রমাণ বহন করে। নিম্নে রায়পুরা ধ্বনি পরিবর্তনের একটি রূপরেখা তুলে ধরা হলো। কেননা পরিপূর্ন রূপরেখা তুলে ধরা দীর্ঘ সাধনাও শ্রমের ব্যপার যা প্রত্যাশা রইল আগামী প্রজন্মের কাছে। পরিবর্তীত ধ্বনি বিশুদ্ধ শব্দ আঞ্চলিক রূপ পরিবর্তীত ধ্বনিমালার প্রভাবে ক্রিয়া সর্বনাম বিশেষেণ ও পরবর্তিতে হচ্চে প্রতিনিয়ত। যার নমুনা। নীচে দেওয়া হল। ক্রিয়াপদ আঞ্চলিক রূপ কোন কোন ক্ষেত্রে ক্রিয়াপদ দ্বিত্ত্ব ব্যবহার হয়ে থাকে। যেমন বলা কওয়া নাই তুমি কই চইল্লা গেলা। লক্ষণীয় যে উপরের উদাহরণে বিশুদ্ধ এবং আঞ্চলিক রূপসহ অবস্থান করছে (বলা কওয়া) সর্বনাম আঞ্চলিক রূপ বিশেষণ আঞ্চলিক রূপ। কোন কোন বিশেষণ পদের দ্বিত্ব প্রয়োগ দেখা যায়। সাধারণত বিশেষণের অবস্থাকে সুদৃঢ় করা এবং গতিশীল করার স্বার্থেই তা হয়ে থাকে।

যেমন, মিঠা >মিডা> মিড্ডা

নুনতা> কডা> কড্ডা

টক> চুকা> চুক্কা

একই কারণে দুটি পাশাপাশি বিশেষণ অবস্থান নিতেও দেখা যায়। এতে বড় ডাঙ্গর হইয়াছে আর এইডা বুজ না? এখানে বড় এবং ডাঙ্গর সমার্থক শব্দ। কোন কোন বিশেষনে দীর্ঘ উচ্চারণেও একই উদ্দেশ্য কাজ করছে ( লাল> লা-লা) মাঝে মধ্যে এই শব্দটিতে উপসর্গের ধাঁচে প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। অল্প > দুগগা> এই দুগ্গা।