০১। |
অবস্থান ও আয়তনঃ |
|
মেঘনা, পুরাতনব্রহ্মপুত্র, আড়িয়ালখাঁ ও কাঁকন নদীবিধৌত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম উপজেলা রায়পুরা নরসিংদী জেলার দক্ষিণ-পূর্বাংশে অবস্থিত| এই উপজেলার উত্তরে বেলাব উপজেলা, পূর্ব কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলা, দক্ষিণে ব্রাহ্মণ-বাড়িয়া জেলার নবীনগর ও বাঞ্ছারামপুর এবং নরসিংদী সদর উপজেলা, পশ্চিমে নরসিংদী সদর ও শিবপুর উপজেলা অবস্থিত ৷এই উপজেলা প্রায় ২৩ o ৫২ ও ২৪o ০৪ উত্তর-অক্ষাংশ এবং৯০o ৫৯ পূর্ব`দ্রঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত ৷রাজধানী ঢাকা ও নরসিংদী জেলা সদর থেকে রায়পুরা উপজেলা সদরের দূরত্ব যথাক্রমে ৭৯কিঃমিঃ এবং ৩২কিঃমিঃ৷ এর মোট আয়তন ৩১২.৭৭বর্গ কিলোমিটার৷ তন্মধ্যে জলাশয় ও প্রশস্তনদী ৪৩.৭৭বর্গ কিলোমিটার| |
|
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
০২। |
ভূ-প্রকৃতিঃ |
|
রায়পুরা অঞ্চলটি প্রাচীনকাল থেকেই হিন্দু বসতিপূর্ণ এলাকা হিসাবে খ্যাত। ‘রায়পুরা’ শব্দটির ঐতিহাসিক ভিত্তি বিশ্লেষণ করলে বুঝা যায় যে, পূর্বেকার ‘রায়’ বংশীয় জমিদারদের জমিদারী এলাকাভু্ক্ত অঞ্চল হিসেবে প্রাধান্য লাভ করে। আর সেই থেকে ‘রায়পুরা’ নামের উৎপত্তি ঘটেছে বলে জনশ্রুতিতে ধারণা করা হয়। রায়পুরা একটি নৈস্বর্গিক ভূ-খন্ড। মেঘনা আর তার শাখা-প্রশাখার জলবিধৌত অন্যতম স্থলভাগ। এরমধ্য দিয়ে চলে গেছে ঢাকা চট্টগ্রাম রেলপথ। এটি একটি বৃহৎ পরিসর থানা। এর ভিতর রয়েছে ছয়টি রেলপথ। বাংলাদেশের তিনটি প্রধান নদী মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র ও আড়িয়াল খাঁ এর চুতুর্দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ইংরেজ শাসন থেকেই এ থানাটি বিশাল জনগোষ্ঠি নিয়ে গঠিত। অনুমান করা হয় নীল কর আদায়ের লক্ষ্যে ইংরেজ শাসকরা এ থানার গোড়া পত্তন করেছিল। তাদের প্রতিষ্ঠিত নীলকুঠি আজো ইংরেজ শাসনের স্বাক্ষর বহন করে এ এলাকায়। ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে প্রতিষ্ঠিত এ থানার সাথে জড়িয়ে আছে তৎকালীন হিন্দু জমিদারদের প্রভাব ও ঐতিহ্যের ইতিহাস। |
|
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
০৩। |
রায়পুরা উপজেলার সাধারণ তথ্যাবলীঃ |
|
রায়পুরা উপজেলা হানাদার মুক্ত হওয়ার তারিখ- ১২/১২/১৯৭১ খ্রি. মোট মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা- ১৪৩৮ জন।
(২) লোকসংখ্যা = ৪,৫৪,৮৬০জন (৩) ইউনিয়ন = ২৪ টি (৪) পৌরসভা = ১টি (৫) গ্রাম = ২৩৪ টি (৬) মৌজা = ১১৩ টি (৭) আদর্শ গ্রাম = ০৩ টি (৮) টেলিফোন একচেঞ্জ = ০২ টি (৯) হাটবাজার = ৪০ টি (১০) জলমহাল = ৩০ টি (১১) মসজিদ = ৬৪৬ টি (১২) মন্দির = ২০ টি (১৩) রেলস্টেশন = ৬ টি (২৭ কি:মি:) (১৪) জুট মিল = ০১ টি (১৫) পেক্ষাগৃহ = ০৪ টি (১৬) খাদ্য গুদাম = ০৩ টি (১৭) ডাকবাংলো = ০২ টি (১৮) নদ-নদী = ০৪ টি (১৯) বানিজ্যিক ব্যাংক = ২০ টি (২০) শিক্ষার হার = ৩৭% (২১) পশু হাসপাতাল = ০১ টি (২২) মোট জমির পরিমান = ৭৭২৮৭ একর (২৩) নার্সারী = ০৯ টি (২৪) এন জি ও = ৩৭ (২৫) মৎস্যজীবী = ১৪২১ (২৬) তাঁতীর সংখ্যা = ১৪,৪০০ (২৭) ঈদগাহ = ১৫১ টি |
|
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
০৪। |
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংক্রান্তঃ |
|
|
|
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
০৫। |
স্বাস্থ্য সেবাঃ |
|
|
|
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
০6। |
ঐতিহাসিক স্থান ও বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বঃ |
|
বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান (২৯শে অক্টোবর, ১৯৪১—২০শে আগস্ট, ১৯৭১) একজন বাংলাদেশী মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত হন। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে চরম সাহসিকতা আর বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ যে সাতজন বীরকে সর্বোচ্চ সম্মান বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করা হয় ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান তাদের মধ্যে অন্যতম।
ছবি |
||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
07। |
মুক্তিযুদ্ধে রায়পুরাঃ |
|
আজন্ম লালিত মুক্তির স্বাদ ‘‘বন্ধনহীন মুক্ত স্বাধীন ’’ সেই সুপ্রিয় স্বাধীনতার অব্যবহিত দুই যুগের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে যখন কোন ছেলে , তার মা , অথবা তার বাবার কণ্ঠে চিৎকার ধ্বনিত হয়ে উঠে , ভাত দাআজন্ম লালিত মুক্তির স্বাদ ‘‘বন্ধনহীন মুক্ত স্বাধীন ’’ সেই সুপ্রিয় স্বাধীনতার অব্যবহিত দুই যুগের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে যখন কোন ছেলে , তার মা , অথবাতার বাবার কণ্ঠে চিৎকার ধ্বনিত হয়ে উঠে , ভাতও । কাপড় দাও । ইজ্জত বাঁচাও ! তখন স্বভাবতই স্বাধীনতার মানে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে ওঠে । প্রশ্ন জাগে , এর জন্যই কি দেশ স্বাধীন করেছিলাম ? অতীত স্মৃতির পাতাগুলো উল্টাতে উল্টাতে মনে পড়ে গা শির শির করা ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর সব কথা ।সেই ’৫২ ’৬৯ ’৭০। কানে বাজে একাত্তরের ৭ ই র্মাচের জনাকীর্ণ রেসকার্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেক মুজিবুর রহমানের বজ্রকন্ঠ-‘ এবারের সংগ্রাম মুুক্তির সংগ্রাম , এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম ।’ শাসন, মোষণ আর বঞ্জনার ঘৃণিত কলঙ্গিত অধ্যায়কে লালসূর্য্য ও সবুজ তৃণ দিয়ে ঢেকে ফেলএত আগুন খেলার সোনার বাংলা হয়ে উঠলো অগ্নি উত্তাল । তরঙ্গ ধেয়ে চললো বাংলাদেশের এক প্রামত্ম থেকে অন্য প্রামেত্ম। ২৫ মে সার্চের কালো রাত্রি আঁধার মুক্ত করতে পতঙ্গের মতো ঝাঁপিয়ে পড়লো বীর বাঘা বাঙালী ; সমত্মান সমত্মতি আনলো ,সঞ্জিবনী সুধা ঢেলে দিলো কর্ণ কূহরে । বাংলাদেশের আবাল বৃদ্ধ বণিতা ঝাঁপিয়ে পড়লো হাহিনীর বিরম্নদ্ধে । বর্তমান নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার পশ্চিমাঞ্চলের সাহসী মানুষ গর্জে উঠলো । স্বাধীনতার অগ্নি সমত্মান রায়পুরাবাসীর প্রাণপ্রিয় স্বাধীনতা সংগ্রাম জঙ্গীরম্নপ ধারণ করলো । গেয়ে উঠলো গান - ‘জাগো অনশন বন্দী যত জগতের লাঞ্ছিত ভাগ্যাহত জাগো’’। রায়পুরার দাসাল সমত্মানরা এতো বেশি সংখ্যায় ভারতের ট্রেনিং শিবিরে যায় যে ভারতীয়রা রায়পুরাকে একটি জেলা হিসেবে প্রায়শই ভুল করতে থাকে । যাহোক রায়ীপুরা থানার মুক্তিযুদ্ধ যারা পরিচালনা করেন তাঁরা হলেন এ্যাডভোকেট আফতাব উদ্দিন ভুঞা , রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু ও আলহাজ্ব গয়েছ আলী মাস্টার । গয়েছ আলী মাস্টার রায়পুরা থানা মুক্তিযোদ্ধাদের কামান্ডার ছিলেন । রায়পুরার আরেক কৃতি সমত্মান কর্নেল নূরম্নজ্জামান ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার । বীরশ্রেষ্ঠ পস্নাইট লেঃ মতিউর রহমান ও অবদান সূর্যসমত্মান । এছাড়া রায়পুরার আরো অনেকে মুক্তিযুদ্ধে দুঃসাহসী অবদান রাখেন । রায়পুরা থানার বিভিন্ন স্থানে হানাদার বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যক্ষ যুদ্ধ হয়েছে । রায়পুরা থানার যে সমসত্ম স্থানে মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে এর বেশির ভাগই রায়পুরার পশ্চিম অঞ্চলে , হাটুু ভাঙ্গা, আমিরগঞ্জ , বাদুয়ারচর রেলসেতুর পাশে । মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে বাদুয়ার চর রেলসেতু মুক্তিযোদ্ধারা মাইনের সাহায্যে উড়িয়ে দেয়। এতে পাক বাহিনী মারাত্মক বাধার সস্মুখীন হয় । এর কিছুদিন পর রামনগর রেলসেতুও মুক্তিবাহিনী মাইনের সাহায্যে উড়িয়ে দেয় । হাঁটুভাঙ্গা বর্তমানে রেলস্টেশনের নিকট পাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তবাহিনীর জোয়ানদের সামানাসামনি যুদ্ধ বাঁধে ।এতে পাক বাহিনী টিকতে না পেরে হেরে যায় । এই যুদ্ধে রহু পাক সেনা নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে টিকতে না পেরে পাসেনারা যকন পালিয়ে যাচ্ছিলো তখন হাঁটুভাঙ্গার জনগণ এমনকি মহিলারাও সেদিন যার যা কিছু আছে তা দিয়ে পিটিয়ে বাকুপিয়ে মক্রসেনাদের হত্যা করেছে । আমাদের মুক্তিসেনাদেরও কিছু সাহসী তরম্নণসহ নিরীহ মা, বোন , দেশের জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়ে শহীদ হয়েছেন । স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়ে বেশীর ভাগ মুক্তিযোদ্ধাই শহীদ হয়েছেন পাকসেনাদের সহযোগী দালাল ও রাজাকাদের হাতে।তৎকালীন রায়পুরা থানা মুক্তিযুদ্ধের র্সবাধিনায়ক আলহাজ্ব আলী মাস্টারের সাথে এ ব্যাপারে আলাপ করলে তিনি বললেন , আমার মাস্টারি জীবনের সবচেয়ে বেদনাদায়ক ইতিহাস হলো এইমুক্তিসংগ্রাম । মুক্তিযুদ্ধের কথা মনে হলেই আমার মন দুঃক ভারাক্রান্ত হয়ে উঠে । আজ আমি নিজেকে বড় অপরাধী মনে করি । কারণ , আমি আমার প্রিয় ছাত্রদেরকে তাদের বাবা মায়ের কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধে নিয়ে গিয়েছিলাম , দেশ স্বাধীন হলে তাদের বাবা মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেবে বলে কিন্তু দুঃখের বিষয় , দেশ স্বাধীন হবার পর যখন কিছু বাবা ও মা আমার কাছে এসে বললেন , ‘মাস্টাসাব আপনে আইছেন আমার ছেলে কই ? কবে আইব ।’ তখন আমি তাদের কোন জবাব দিতে পারিনি । আমার মনে হচ্ছিলো , আমি সবচেয়ে অপরাধী , আমি সবার চেয়ে বেঈমান ।সারা জীবন অনুশোচনা করলেও আমার প্রায়শ্চিত্ত হবে না । আজ যকন দেখি স্বাধীনতার ২৮ বছর পর যারা জীবন দিয়ে গেল ; তাদের মা, বাবা, ভাই , বোন , ছেলে , মেয়ে ভাত ওকাপড়ের অভাবে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে , তখন আমি ঠিক থাকতে পারিনা ।ইচ্ছা করে আর একটা মুক্তিযুদ্ধ করি । এরজন্যই কি সেদিন মুক্তিসংগ্রাম করেছিলাম? সেদিন ভেবেছিলাম ; দেশ স্বাধীন হলে , মানুষ পাকিসত্মানিদের হাত থেকে মুক্তিপাবে , মানুষ তাদের রাজনৈতিক মুক্তি পাবে । গণতান্ত্রিক মুক্তি পাবে , কিন্তু কই !আজ ও মানুষ না খেয়ে মরছে । মা, বোন , ভাতের অভাবে পথে ঘাটে ইজ্জত বিক্রি করছে; যে শিশুর লেখাপড়া করার কথা , সে শিশু ভাতের অভাবে জলের দামে শ্রম দিচ্ছে । মানুষ তার গণতামিক অধিকার হারচচ্ছে। একদিকে নগণ্য মানুষ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে অন্যদিকে গরিষ্ঠ সংখ্যক মানুষ দিন দিন ভূমিহীন হচ্ছে।আজ দেশবাসীর কাছে আমার প্রশ্ন , এই অবস্থার কি পরিবর্তন আসবে না। |
||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
07। |
রায়পুরাঃ ইতিহাস ও ঐতিহ্যঃ |
|
মেঘনা, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, আড়িয়াল খাঁ ও কাঁকন নদী বিধৌত বাংলাদেশের বৃহত্তম উপজেলা রায়পুরা নরসিংদী জেলার দক্ষিণ-পূর্বাংশে অবস্থিত। এই উপজেলার উত্তরে বেলাব উপজেলা, পূর্বে কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা, দক্ষিণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর ও বাঞ্ছারামপুর এবং নরসিংদী সদর উপজেলা, পশ্চিমে নরসিংদী সদর ও শিবপুর উপজেলা অবস্থিত। এই উপজেলা প্রায় ২৩০ ৫২// ও ২৪০ ০৪// উত্তর অক্ষাংশেএবং ৯০০ ৫৯// পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। রাজধানী ঢাকা ও নরসিংদী জেলা সদর থেকে রায়পুরা উপজেলা সদরের দূরত্ব যথাক্রমে ৭৯ কিঃ মিঃ ও ৩২ কিঃ মিঃ। এর মোট আয়তন ৩১২.৫০ বঃ কিঃ মিঃ। তন্মধ্যে জলাশয় ও প্রশসত্ম নদী ৪৩.৭৭ বঃ কিঃ মিঃ। রায়পুরা নামকরণের ইতিহাসঃ
কথিত আছে যে, বৃটিশ শাসন আমলে লর্ড কর্ণওয়ালিশের চিরস্থায়ী বন্দোবসত্ম প্রথা চালু হওয়ার সময় এ অঞ্চল ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা জমিদারদের আওতায় আসে। উক্ত জমিদারদের কাছ থেকে সিকিমি পত্তন নেন এখানকার রায় উপাধিধারী কিছুসংখ্যক অমাত্য। এদের মধ্যে উলেখ যোগ্য হলো প্রকাশ চন্দ্র রায়, পূর্ণ চন্দ্র রায়, মহিম চন্দ্র রায়, ঈশ্বর চন্দ্র রায় প্রমুখ। এদের নামানুসারে প্রথমে এলাকার নাম হয় ‘‘রায়নন্দলালপুর’’। পর্যায়ক্রমে নামের অপভ্রংশ রায়পুরা নামে প্রচলিত হয়। এখানে উলেখ্য যে, পূর্বে এই এলাকা ‘‘কালীদহসাগরেরচর’’ নামে পরিচিত ছিল। পাকিসত্মান আমলের প্রথম দিকেও এ অঞ্চল ময়মনসিংহ কালেকটরেটের আওতাভূক্ত ছিল। (তথ্যসূত্রঃ ১৮৯০ সালের গেজেটেরিয়ার)। এ উপজেলাকে নিম্নবর্ণিত প্রধান তিন ভূ-প্রাকৃতিক অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছেঃ (ক) মধুপুর গড় ভূমি যা উপজেলার প্রায় ২ শতাংশ ভূমি, (খ) ব্রহ্মপুত্র পলল ভূমি যা উপজেলার প্রায় ৫৫ শতাংশ ভূমি এবং (গ) মেঘনা পলল ভূমি যা উপজেলার প্রায় ৪৩ শতাংশ ভূমি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি নরসিংদী জেলাধীন রায়পুরা একটি ঐতিহ্যবাহী বৃহৎ উপজেলা। বাংলাদেশের প্রধান তিনটি নদী মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র, আড়িয়াল খাঁ এ উপজেলার চতুর্দিকে ত্রিভূজাকারে বেষ্টন করে আছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম কেন্দ্র অত্র উপজেলাটি প্রকৃতিগতভাবেই দুই ভাগে বিভক্ত। উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের ৮টি ইউনিয়ন চরাঞ্চল অর্থাৎ নিম্নভূমি। বাকী উত্তরাঞ্চল পাহাড়ী অঞ্চল (লালমাটি) এবং সমতল ভূমি। দক্ষিণাঞ্চলের চর এলাকায় প্রচুর মিষ্টি আলু, খিরা, বাঙ্গি, তরমুজ ও চিনাবাদাম উৎপন্ন হয় এবং উত্তরাঞ্চলের পাহাড়ী এলকায় প্রচুর কাঁঠাল ও শাক-সব্জী উৎপন্ন হয়। ২৪টি ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত রায়পুরা উপজেলার নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তৎকালীন হিন্দু জমিদারদের বিশাল প্রভাব ও ঐতিহ্য। জমিদারী প্রথা বিলুপ্তির পর তারা অনেকেই চলে গেছেন শহরে কিংবা অন্যত্র। তবে অনেকেরই পুরনো বাড়ীর ধ্বংসাবশেষ এখনও স্মৃতি হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে। অনুমান করা হয়, নীল চাষের লক্ষ্যেইংরেজরা ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে এই উপজেলার গোড়াপত্তন করেছিলেন। তাদের প্রতিষ্ঠিত নীলকুঠি আজও তার স্বাক্ষ্যবহন করছে। ইংরেজ আমল থেকে বিশাল জনগোষ্ঠীর থানা হিসেবে পরিচিত থাকলেও পরবর্তীকালে এ থানার অংশবিশেষ ভেঙ্গে শিবপুর, মনোহরদী ও বেলাব নামে তিনটি থানার গোড়াপত্তন হয়েছে। বৃটিশ আমল থেকেই শিক্ষাদীক্ষায় এ উপজেলা ছিল ঐতিহ্যবাহী। এদশের কৃতিসমত্মান কবি শামসুর রাহমান, কবি ও কথা সাহিত্যিক ডঃ আলাউদ্দিন আল-আজাদ, প্রাবদ্ধিক বাবু অক্ষয়কুমার রায়, শিক্ষাবিদ জিয়াউদ্দিন আহমেদ, শফিক উদ্দিন আহমেদ এদেশের শিক্ষাও সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে উজ্জ্বল করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর জনাব খোরশেদ আলম, ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ জনাব ওসমান গণি সাহেবের জন্মস্থানও এ উপজেলায়। উলেখ্য যে, প্রথিতযশা সঙ্গীতজ্ঞ শিল্পী ওসত্মাদ আলাউদ্দিন খাঁ শৈশবে তার মাতুলালয় রায়পুরাতে লালিত-পালিত হন। খেলাধূলার ব্যাপারেও এ উপজেলার অতীত ঐতিহ্য রয়েছে। বৃটিশ শাসনামলে রায়পুরার ফুটবল টিম সূদুর কোলকাতা ও আসামের বিভিন্ন স্থানে যথেষ্ট সুনাম কুড়িয়েছে। রায়পুরার জীবন-জীবিকা মুলতঃ কৃষি নির্ভর হলেও এক সময় তাঁত শিল্প এ এলাকায় ব্যাপক প্রসার লাভ করেছিল। বর্তমানে হাসনাবাদ, আমিরগঞ্জ, রাধাগঞ্জ এবং পশ্চিমাঞ্চলের বেশ কিছু পাওয়ার লুম তাঁত শিল্পের অতীত ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে। এলাকার তাঁতীরা তাঁতের কাপড় যথা লুঙ্গী, গামছা, শাড়ী এবং গ্রে কাপড় উপজেলাবাসীর চাহিদা মিটিয়ে প্রাচ্যের ‘‘ম্যাঞ্চেস্টার’’ বলে খ্যাত বাবুরহাটে (শেকেরচর) - নিয়মিত সরবরাহ করে আসছে। বিভিন্ন প্রগতিশীল আন্দোলনেও এ উপজেলার লোকজন পিছিয়ে নেই। মুসলিম লীগের পাকিসত্মান আন্দোলনে রায়পুরার জনগণ যে উদ্যোগ নিয়েছিল ও উন্মাদনা দেখিয়েছিল সারাবাংলায় তার দ্বিতীয় নজির ছিল না। রাযপুরার মাটিতেই সেই আন্দোলন সংগ্রামে রূপামত্মরিত হয়েছিল। অনেকেই মনে করেন এখান থেকেই শুরম্ন হয়েছিল পাকিসত্মান আন্দোলনের সূচনা। পাকিসত্মান প্রতিষ্ঠার পর জমিদারী প্রথা উচ্ছেদ ও মহাজনী শোষণের বিরম্নদ্ধে দেশব্যাপী যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল তাতেও রায়পুরার ভূমিকা ছিল গৌরবোজ্জ্বল। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে এ উপজেলার প্রায় তিন হাজার মুক্তিপাগল স্বাধীনচেতা লোক সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে এদেশের স্বাধীনতা বাসত্মবায়নের পথে এক অবিস্মরণীয় অবদান রেখে জাতির ইতিহাসে এক নব দিগমেত্মর উন্মেষ ঘটিয়েছিল। রায়পুরা উপজেলা হতে এত বিপুলসংখ্যক লোক মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল যা বাংলাদেশের অনেক জেলা হতে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের চেয়েও বেশী। উলেখ্য, স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম মুক্তিযোদ্ধা বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেনেন্ট মতিউর রহমান রায়পুরারই কৃতিসমত্মান। মুক্তিযুদ্ধে এ মহান বীর সৈনিকের অবদান রায়পুরার জনগণ তথা দেশবাসী গভীর শ্রদ্ধাভরে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছে। রায়পুরা উপজেলা ঢাকা মহানগরীর নিকটবর্তী একটি বিশাল উপজেলা। রাজধানীর নিকটবর্তী হওয়া সত্ত্বেও এই উপজেলার অভ্যমত্মরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব একটা ভাল ছিল না। বিশেষ করে চরাঞ্চলের ৮টি ইউনিয়রেন সাথে উপজেলা সদরের যোগাযোগ এক প্রকার বিচ্ছিন্নই ছিল বলা যায়। নৌকা এবং পায়ে হাঁটা ছাড়া যোগাযোগের বিকল্প কোন ব্যবস্থা এখানে ছিল না। ফলে, ঐ সকল এলাকায় কখনো কখনো আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছিল । বর্তমানে চড়াঞ্চলের ৬ টি ইউনিয়ের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। এই ৬টি ইউনিয়নে খুব প্রশস্ত রাস্তা ও ব্রীজ নির্মান হয়েছে এবং একটি ফেরি আছে। বর্তমানে ফেরিঘাটের নাম পান্থশালা। এই পান্থশালা জায়গাটি ধীরে ধীরে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এখানে অনেক পর্যটক ঘুরতে আসে। প্রায় ৫ লক্ষজনসংখ্যা অধ্যূষিত এই উপজেলায় পর্যাপ্তসংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। উলেখ্য, এই উপজেলায় কোন সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় নেই। অভ্যমত্মরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে এই উপজেলার বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠকে দক্ষজনশক্তিতে পরিণত করা গেলে এবং আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে তাদের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করা গেলে এটিকে আদর্শ উপজেলায় উন্নীত করা সম্ভব হতো।‘ |
||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
09। |
রায়পুরা’র ইউনিয়ন সমূহ: |
|
|
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস